র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব ও এর বর্তমান-সাবেক ছয় কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য নতুন কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সাবেক কূটনীতিক ও বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্র এ পদক্ষেপ নিয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের জন্য প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতির কারণ হবে না।
এতে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কিন্তু এ ধরনের নেতিবাচক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ঘোষণা দেওয়াটা বাংলাদেশের ভাবমূর্তির ওপর আঘাত। তাই উত্তর কোরিয়া ও মিয়ানমারের মতো দেশের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের নাম কেন নিয়ে আসা হলো কূটনৈতিকভাবে তা খুঁজে দেখা ও পরিস্থিতি মোকাবিলাকেই চ্যালেঞ্জ বলছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। শুক্রবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে নেওয়া ব্যবস্থায় রাজস্ব মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ, মিয়ানমার, চীন এবং উত্তর কোরিয়ার বেশ কিছু সংস্থা ও ব্যক্তির বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরমধ্যে বাংলাদেশের বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক ও র্যাবের মহাপরিদর্শকসহ ছয় কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
সংস্থা হিসেবে র্যাবের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাবকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। র্যাবের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে ছয় কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনে তারা। এটাই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনো বাহিনী ও কর্মকর্তার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বা বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞার ঘটনা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম বলেন, এটা এক ধরনের চাপ তৈরির চেষ্টা।
এই চাপ তারা কেন দিচ্ছে তা খুঁজে দেখতে হবে। তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণেও হতে পারে, আবার তাদের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ধরনের প্রেসার গ্রুপের কারণেও হতে পারে। আবার আন্তর্জাতিক রাজনীতির কোনো বিষয় আছে কি না তাও দেখতে হবে। তবে যাই হোক সেটা কূটনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করার চেষ্টা করতে হবে। অবশ্যই এটা একটা কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, আমেরিকা সবসময়ই যা ইচ্ছা তাই করে। এখন দেখার বিষয় আমরা তাদের এ ধরনের পদক্ষেপের বিপরীতে কূটনৈতিকভাবে কী ধরনের অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারি।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের আরেক সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এম শমসের মবিন চৌধুরী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ নিষেধাজ্ঞায় দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। এমনকি রপ্তানি বা বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। সাবেক এই কূটনীতিক বলেন,
আমি যতটুকু জেনেছি, তা হলো- যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কয়েকজন ব্যক্তির ওপর এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তারা সে দেশে কোনো রকমের আর্থিক কার্যক্রম চালাতে পারবেন না। কিংবা সফরও করতে পারবেন না। যেহেতেু যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের পক্ষ থেকে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, সেহেতু বাংলাদেশের সরকারকে কূটনৈতিকভাবেই তা মোকাবিলা করতে হবে। আমার মনে হয়, আমাদের দেশের সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিকভাবে এ ঘটনার বিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যা চাওয়া দরকার।
বিশেষ করে- কী কারণে দেশটি এমন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, কেন করেছে? এর পেছনে তাদের মূল উদ্দেশ্যটা আসলে কী! তা ভালো করে জেনে সরকারকেই কূটনৈতিকভাবে তা মোকাবিলার উদ্যোগ নিতে হবে। তাছাড়া সার্বিক বিষয়টাই ভালো করে পর্যবেক্ষণ শেষে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তারও সুনির্দিষ্ট কারণটা কূটনৈতিকভাবে বিস্তারিত জানতে চাওয়া উচিত।
তবে ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজন লোকের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের কূটনৈতিক বা ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অন্য কোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র অনেক দেশের সঙ্গেই এটা করেছে। কিন্তু কোন তথ্যের ভিত্তিতে তারা এটা করল? যে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাই খারাপ। অনেক দেশেই এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। আমি যদি পাকিস্তান বা কাশ্মীরের কথা বলি সেখানে হচ্ছে। সেখানে তো তারা এ ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সাহসও পাবে না হয়তো। আমি মনে করি এর মধ্যে আরও কিছু আছে, সেটা হয়তো আমাদের জানা নেই। তবে এটা নিয়ে আমি বিস্মিত।
তিনি বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা তো তাদের হিসাবেই বাংলাদেশের চেয়ে আমেরিকায় আরও বেশি হয়। আমেরিকা তো তার নিজের ওপরে এ ধরনের পদক্ষেপ নেয় না। আমেরিকার এ ধরনের পদক্ষেপে বাংলাদেশ চিন্তিত হবে, এখন আমরা আর সেই অবস্থায় নেই মন্তব্য করে ড. ইমতিয়াজ বলেন, বাংলাদেশের যত বেশি উন্নয়ন হবে তত বেশি ঝামেলা আসবে। তবে আমি আশা করি, বাংলাদেশের যারা নিরাপত্তা দেখেন তারাও সচেতন হবেন। বিচারবহির্ভূত হত্যা একটাও গ্রহণযোগ্য না। তবে এটা আমেরিকার কথায় করতে হবে, তা আমি ঠিক মনে করি না।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।